ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোরকদি ইউনিয়নের চরবাশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় করণকৃত ৪ শিক্ষকের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এক মামলায় দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের নানা জটিলতা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে উপজেলার চরবাশপুরে স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় চরবাশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। মামলার বাদী কাটাখালী গ্রামের বর্তমান কোরকদী ইউনিয়নের মোঃ হাবিবুর রহমান মন্ডল প্রধান শিক্ষকদাবী কৃত, চরবাশপুর গ্রামের হাচান মোল্যার মেয়ে সালমা আক্তার, বন্দর শঙ্করপুর গ্রামের আঃ সামাদ শেখের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, বন্দর শঙ্করপুর গ্রামের অতুল চন্দ্র পালের মেয়ে প্রতিভাপাল তৎকালীন সময় থেকে বর্তমান ২০২১ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক হিসাবে দাবি করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বর্তমান স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি চরবাশপুর গ্রামের মোঃ আহম্মদ আলী শেখ, রামদিয়া গ্রামের অহিদ শেখের মেয়ে কেয়া সুলতানা (প্রধান শিক্ষক), বৈকুন্ঠপুর গ্রামের ফুলরাজের স্ত্রী শারমিন আক্তার, রামদিয়া গ্রামের জামান মোল্যার মেয়ে শিউলি, বৈকুন্ঠপুর গ্রামের রফিক মোল্যার মেয়ে রিফাত জাহান সহকারি শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তারা বলেন বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হলেও ১৯৯৭ সালের পর থেকে এর সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩/১৪ বছর বিদ্যালয়টির কোন অস্তিত্ব ছিলো না। ২০১২ সাল থেকে পুনরায় স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে আমরা সকল নিয়ম অনুসারে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকার সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেবার পর থেকে বাদীগণ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রদান করেন।
স্থানীয় লোকদের ভাষ্য থেকে প্রথম দাবীকৃত শিক্ষাকদের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায় না। এবং তারা যে কাগজ পত্র আদালতে প্রদান করেছে তা সম্পর্ণই অসত্য। স্কুল জাতীয় করণ হওয়ায় তারা এ মামলা দায়ের করে আমাদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরা আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেয়া সুলতানা তাঁর মোবাইলে জানান, বড়ই মানবেতর জীবনযাপন করছি পরিবার নিয়ে । চাকরী আছে বেতন নাই । একটি ভুয়া মামলার কারনে। সত্যের জয় হবেই । আমি ও আমার সহকর্মিরা সবাই নিয়মাতান্ত্রীক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে আজ অবধি কর্মরত আছি । বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ঝুমা সাহা তাঁর মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষকগণ যে যারমত চলে যান। বিদ্যালয়টি পুনঃ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারী বিধিমোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে বর্তমান শিক্ষকগণ কর্মরত আছেন। জাতীয় করণের পরবর্তী ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে তারা আদলতে একটি মামলা করেন। যে কারনে কর্মরত শিক্ষকগনের বেতন ভাতাদি বন্ধ হয়ে যায় । আদালতে নির্দেশে বেতন ভাতাদি বন্ধ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে শিক্ষকগণ মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। মানববিক কারনে হলেও একটি সুরাহ হওয়ার দরকার ।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলামের কাছে তাঁর মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি জানান বিষয়টি মানবিক। কর্মরত শিক্ষকগণ শ্রম দিলেও তারা শ্রমের মুজুরী পাচ্ছেন না । দিনের পর দিন শ্রম দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে বিদ্যালয়টি সচল রেখেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য উচ্চতর আদলতে মামলা থাকায় কর্মরত শিক্ষকদের বেতন ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নাই । আদালতেই দুঃখজনক বিষয়টির সমাধান হবে। আর সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।